রসুন প্রায়ই ৫ হাজার বছর ধরে মসলা, খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, রসুনকে স্বাস্থ্য রক্ষা ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রসুনের গুনাগুন সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। সুগার, হূদরোগ, অতিরিক্ত রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রসুন। রসুন প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এরকম অনেক উপকারিতা রয়েছে রসুনের।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা কি?
রসুনের এত উপকারিতা যে রসুনকে মর্ত্যের অমৃত বলা হয়। প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত এক কুয়া বিশিষ্ট রসুন তবে এর দাম অনেক বেশি। এবং দ্বিতীয়টি হলো বহু কুয়া বিশিষ্ট রোশন এটি সহজলভ্য এবং এটির দাম অনেক কম। রসুন ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। সুগার হল একগুচ্ছ রোগের সমাহার। এই রোগের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিনের অসম ক্ষরণ হয়ে থাকলে মূলত এই রোগের হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে রসুনের নামক এক ধরনের কম্পাউন্ড থাকে, যা ইনসুলিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে সুগার কমে যায়। এজন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩ কোয়া রসুন খাওয়া উচিত। রসুন যদি চিবিয়ে না খেতে পারেন তাহলে কুচিকুচি করে গিলে খেতে পারেন।
রসুন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার LDL কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে, সে ক্ষেত্রে সারাজীবন কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইলে প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন খালি পেটে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে দু'একদিন বাদ গেলেও ক্ষতি নেই। রসুন LDL কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে রসুন লিভারে কোলেস্টেরল সংশ্লেষ কমিয়ে দেয়। কোলেস্টেরল কেশরের বাইরে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া কে ত্বরান্বিত করে রসুন।
রসুন হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে অনুযায়ী, সম্পূর্ণ বিশ্বের মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি কারণ হলো হৃদরোগ। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৭.৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় হৃদরোগের কারণে। এবং যার ৮০% উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ২৩.৬ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারাতে পারে হৃদরোগের কারণে। তাই আপনার হৃদযন্ত্র কে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেতে পারেন। কারণ রসুনে সালফার এবং বায়ু সালফার নামক উপাদান থাকে। যা হৃদরোগকে প্রতিরোধ করতে পারে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুযায়ী, রসুন অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হূদযন্ত্রের দুর্বলতা ইত্যাদি রোগে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও রসুন কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হূদেরাগের ঝুঁকি কমায়।
রসুন প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রেসার বলতে এখানে হাই প্রেসার বা হাইপারটেনশন বুঝানো হয়েছে। সারা পৃথিবীতে ৩০.৫% মানুষ মারা যায় উচ্চ রক্তচাপের কারণে। অতি সম্প্রতি চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী, ২০টি গবেষণার উপর ভিত্তি করে রসুন কে একটি উত্তম হাই ব্লাড প্রেসারের ঔষধ হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে উচ্চ রক্তচাপ প্রবল আকারে দেখা দেওয়ার পর, রসুন খেলে যেমন উপকার পাওয়া যাবে না। তবে এক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের সাংঘাতিক অবস্থা কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অন্যান্য ওষুধ খেতে হবে। এবং সেই সাথে প্রতিদিন সকালে রসুন খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ আয়াত আসার পর শুধুমাত্র রসুন খেয়ে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
রসুন প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, খালি পেটে রসুন খেলে তা শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। তাই আপনার দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কে দূর করতে, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেতে পারেন। যা ম্যাজিকের মত আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করবে।
রসুন যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। পুরুষের যৌন অক্ষমতার ক্ষেত্রে রসুন খুব ভালো ফল দিয়ে থাকে। যৌন ইচ্ছা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে রসুনের ব্যবহার খুব কার্যকরী। কোন দুর্ঘটনার কারণে অথবা আপনার বয়সের কারণে আপনার যৌন ইচ্ছা কমে গেলে, রসুন আপনাকে আপনার যৌন ক্ষমতা ফিরে পেতে সাহায্য করবে। রসুন দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য আমাদের দেহের সুস্থ শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে সুস্থ শুক্রাণু তৈরি করতে রসুন বিশেষভাবে কাজ করে। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেলে আপনার যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেহের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
রসুন বাত ব্যাথা নিয়ন্ত্রণ করে। যদি আপনি বাত ব্যথার কারণে ভুগে থাকেন তাহলে রসুন আপনাকে উপকৃত করবে। দ্রুত উপকারিতা পেতে রসুন কুচি কুচি করে কেটে রাখুন এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর তাকে ফেলুন। এবং তার ২০ মিনিট পর সকালের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। গাঁটে গাঁটে ব্যথা এবং যন্ত্রণা উপশমের জন্য, রসুনের তেল মালিশ করতে পারেন।
রসুন দাঁতের ব্যাথা বা যন্ত্রণা কমায়। দাঁতের যন্ত্রণা কমাতে রসুন বেশ কার্যকরী। রসুন থেঁতো করে দাঁতের গোড়ায় লাগালে দাঁতের যন্ত্রণা কমে যায়। হঠাৎ করে যদি দাঁতের যন্ত্রণা দেখা দেয় বা মাড়ি ফুলে যায়, তাহলে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে দাঁতের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। এতে দ্রুত দাঁতের ব্যাথা কমতে শুরু করবে। এছাড়াও পাইরিয়া সারাতে রসুন ভালো কাজ করে।
রসুন যক্ষা নিরাময় করে। যক্ষা রোগের ওষুধ খাওয়ার পরেও রোগী বারবার যক্ষা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় যক্ষা রোগের ঔষধ কাজ করছে না। সেই ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। এই ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসা সঙ্গে সঙ্গে রসুন খাওয়া যেতে পারে। এতে রূপ সালে দ্বিতীয়বার যক্ষা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এক্ষেত্রে রসুনের রসের ২০-৩০ ফুটা সামান্য জলে মিশিয়ে দিনে ৩ থেকে ৪ বার খাওয়া উচিত।
আরো দেখুন : কিডনি ভালো রাখার উপায়
উপরোক্ত রোগ গুলো ছাড়াও রোশন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। রসুনের উপকারিতা ও গুনাগুন অনেক। নিয়মিত রসুন খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই আমাদের নিয়মিত রসুন খাওয়া উচিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন