আপনি যদি সঠিক সময় এবং সঠিক পরিমাণে জল পান করেন, তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য অমৃত সমান হয়ে উঠতে পারে।
গরম জল কখন খাওয়া উচিত?
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আপনি গরম জল খেতে পারেন। এছাড়াও আপনি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম জল খেতে পারেন। তাহলে আপনি অনেক রোগের হাত থেকে সহজে মুক্তি পাবেন এবং বিভিন্ন উপকারিতা পাবেন। এছাড়াও আপনি সারাদিন কিছু সময় পর পর গরম জল পান করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, এখানে গরম জন বলতে হালকা গরম জল বুঝানো হয়েছে যা পান করার যোগ্য। খুব বেশি গরম জল কিন্তু কখনোই খাবেন না। জলকে প্রথমে ভালো করে ফুটিয়ে নিন তারপর ঠান্ডা করে অর্থাৎ পান করার যোগ্য হলে তারপর পান করুন। এভাবে আপনি যদি সারা বছর গরম জল পান করতে পারেন, তাহলে আপনি দেখবেন সহজেই ১২ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন।
গরম জল খাওয়ার উপকারিতা
সকালে সম্পূর্ণ পেট পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিক অর্থাৎ এসিডিটির সমস্যা, অম্বল এর সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য গরম জল পান করা খুবই প্রয়োজনীয়। সকালে খালি পেটে গরম জল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি সহজেই এই সব রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। গরম জল খেলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাবার খাওয়ার পরে ঠান্ডা জল খেলে পাকস্থলীর ভেতর ফ্যাটের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে পাগল তুলির কার্যক্ষমতা কমে যায়। সেইসাথে অন্ত্রের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই খাবার পর ঠাণ্ডা জলের পরিবর্তে হালকা গরম জল খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ঠান্ডা জল পান করার জন্য যে যে সমস্যাগুলো হয়ে থাকে, সেগুলো গরম জল খেলে একেবারেই হয় না। সেইসাথে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। ফলে গ্যাস্ট্রিক অর্থাৎ এসিডিটির মতো সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। গরম জল খেলে শরীর বিষাক্ত টক্সিন মুক্ত হয়। যখন আমাদের শরীরে ক্ষতিকর টক্সিন মাত্রা বাড়তে থাকে, তখন কিডনি শরীর থেকে সেই বিষাক্ত টক্সিনগুলোকে বের করে দেয়। তা না হলে আমাদের দেহে নানা রকমের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এক্ষেত্রেও গরম জল নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
আরো দেখুন : আদা খাওয়ার উপকারিতা
গরম জল খাওয়া মাত্র আমাদের শরীরে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে ঘাম হতে শুরু হয়, এবং এভাবে ঘামো মধ্য দিয়ে টক্সিন গুলো বের হয়ে যেতে শুরু করে। আর যদি গরম জলে অল্প পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে, আরো উপকারিতা পাওয়া যায়। গরম জল আপনার ওজন কম করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে আপনি যদি চিন্তিত থাকেন, তাহলে আজ থেকেই গরম জল খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ফল পাবেন একেবারে হাতেনাতে এবং খুব দ্রুত। আসলে, গরম জল খেলে হজম ক্ষমতা আর উন্নতি ঘটে। ফলে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার সুযোগ থাকে না। শুধু তাই নয় গরম জল প্যাস্টেল গুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে দেহের ওজন সহজেই কমে যায়।
গরম জল ঠান্ডা লাগা এবং গলা ব্যথার প্রকোপ কমায়। এই ধরনের শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে, গরম জলের কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে। গরম জল ঠান্ডা লাগা এবং গলা ব্যথা দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে সেইসাথে বন্ধ নাক পুনরায় সচল করতে সাহায্য করে।
গরম জল আপনার বয়স ধরে রাখে। গরম জল আমাদের ত্বকের ক্ষত সারিয়ে ত্বকের উন্নতি ঘটায়। সেইসাথে ত্বক টানটান হয়ে উঠে এবং ত্বকের বলিরেখা কমে যায়। ফলে বয়সের কোনো চাপেই ত্বকের উপর পড়তে পারেনা। শরীরে টক্সিন এর মাত্রা যত কমে তত শরীর এবং ত্বকের বয়স কমে। তাই তারুণ্য ধরে রাখতে নিয়মিত গরম জল পান করা উচিত। এছাড়াও গরম জল পান করলে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। চুলের গোড়ায় তাকান নার্ভের সচলতা বৃদ্ধি করতে গরম জল বিশেষভাবে সাহায্য করে। ফলে গরম জল নিয়মিত খেলে নার্ভের রক্ত চলাচল বেড়ে যায় এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটে ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও গরম জল খাওয়ার উপকারিতা আছে যেমন : মানসিক চাপ কমায়, নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়।
গরম জল খাওয়ার নিয়ম
একেবারে অধিক পরিমাণে গরম জল খাওয়া ঠিক নয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা জল পান করার সময় একেবারে অধিক পরিমাণে জল পান করে থাকে। এমনটা করা কিন্তু একেবারেই উচিত নয়। কারণ এভাবে জল পান করলে শরীরের ভিতর হঠাৎ করে চাপ বেড়ে যায়। ফলে দেহের অনেক অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সব সময় অল্প অল্প করে জল পান করতে হবে। ভুলেও দাঁড়িয়ে জল খাবেন না। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, বসে এবং অল্প অল্প করে জল পান করলে পেশি এবং নার্ভাস সিস্টেম এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে হজম ক্ষমতা আরও উন্নতি ঘটে। তাই যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, বসে জল পান করতে হবে। দাঁড়িয়ে জল পান করলে দেহের ভারসাম্য ঠিক থাকেনা। ফলে আমাদের ক্ষতি হয়।
আরো দেখুন : এসিডিটি দূর করার উপায়
এছাড়াও, বেশ কিছু বিষয়ের উপর নজর দেওয়া উচিত যেমন : সকালে ঘুম থেকে উঠেই জল পান করতে হবে। সারাদিনে প্রায়ই ৩ লিটার জল পান করা প্রয়োজন। খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল খাবেন না। খাবার খাওয়ার প্রায় এক ঘন্টা পর হালকা গরম জল খেতে পারেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন