আজও প্রায় ৭০% লোক ঘুমের সঠিক পজিশন জানেনা। ভুল পজিশন এর কারণে অনেকেই রাতে ঠিক ভাবে ঘুমোতে পারে না, অথবা রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যেতে থাকে কিংবা ঘুমাতে অনেক বেশি সময় লাগে। এগুলো ছাড়াও হঠাৎ করে ঘাড়, কাঁধ, কোমরে ব্যথা শুরু হয়। এছাড়াও হজমের সমস্যা, সারাদিন অলসতা, সকালে পেট পরিষ্কার না হওয়া, রক্তের চাপ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি আমাদের ঘুমের পজিশন এর উপর নির্ভর করে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আমাদের ত্বক এবং চুলের গুনাগুন আমাদের ঘুমের পজিশন এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। কিছু লোক ডানহাতে দিকে মোর নিয়ে ঘুমাই, কিছু লোক বা হাতের দিকে, কিছু লোক পিঠের উপর ভর করে, আবার কিছু লোক পেটের উপর ভর দিয়ে ঘুমায়। এই সকল ঘুমের পজিশন আমাদের শরীরে আলাদা আলাদা প্রভাব ফেলে।
ঘুমানোর সঠিক পদ্ধতি
পেটের উপর ভর দিয়ে ঘুমানো সবচেয়ে ক্ষতিকারক। বিশেষ করে নিদ্রাহীনতা এবং হাঁপানি রোগীদের জন্য। কারণ এভাবে ঘুমানোর সময় আমাদের পেটের সাথে সাথে ফুসফুসেও চাপ পড়ে। যার জন্য আমাদের ঘুমের সময় শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। পেটের উপর ভর দিয়ে ঘুমানোর সময় আমাদের মেরুদণ্ডের উপর চাপ পড়ে। এই জন্য যারা পেটের উপর ভর দিয়ে ঘুমায় তাদের ধীরে ধীরে পিঠের ব্যথা শুরু হয়। আবার পেটের উপর ভর দিয়ে ঘুমানো হজম ব্যবস্থার জন্য ভালো নয়।
ডান কাঁধে ভর দিয়ে ঘুমানো আমাদের শরীরের জন্য সঠিক নয়। আমাদের শরীরে পাচনতন্ত্র দেখলে বুঝা যায় যে আমাদের শরীরের উল্টো হাট বাম দিকে অবস্থিত। ডান দিকে ঘুমানো পজিশন আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম কে খুব খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। কেননা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ এর কারনে আমাদের পেট প্রাকৃতিক জায়গা থেকে নিচের দিকে ধাবিত হতে থাকে। লম্বা সময় ধরে ডান দিকে ঘুমানোর জন্য, পেটে থাকা কারদো বিপরীত দিকে যেতে থাকে। যার ফলে খাদ্যগুলো খাওয়ার পর সঠিকভাবে পাচন পায় না। ফলে এসিডিটি, টক ঢেকুর ওঠা, পেট ফোলা ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়। তবে ইসলামিক ভাবে যেহেতু সব ভালো কাজকে ডান হাতে প্রাধান্য দিতে বলেছে, তাই আমরা ঘুমের সময় ডান দিক থেকে শুরু করতে পারি। ডান দিক থেকে শোয়া মানে এই নয় যে সারারাত আর অন্য কোন দিকে কাত হওয়া যাবে না।
ঘুমানোর সঠিক পজিশন কোনটি?
আপনি যদি পেটের উপর ভর দিয়ে চিত হয়ে ঘুমান। তাহলে এটা তেমন ভুল নয়। কিন্তু, বাম হাতের দিকে মোড় নিয়ে ঘুমানো সবচেয়ে ভালো। আর, আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে ঘুমের পজিশন পরিবর্তন করে দিলে আমাদের স্বাস্থ্যের কতটা ভালো পরিবর্তন আসতে পারে। যদিও আয়ুর্বেদিক হোক কিংবা মর্ডান মেডিকেল সাইন্স সব জায়গায় বাম দিকে মুখ দিয়ে ঘুমানো ভালো বলেছে। বামদিকে ফিরে ঘুমালে এমন নয় যে আপনার শুধু পাচনতন্ত্র ভালো থাকবে, বামদিকে ফিরে ঘুমালে নানা ধরনের রোগ এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে দ্রুত উন্নতি ঘটতে থাকে। আজও এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই অজানা। অনেকেরই ভুল পজিশনে ঘুমানো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
কেন বামদিকে ফিরে ঘুমাতে হবে? বামদিকে ফিরে ঘুমালে আমাদের শরীরে কি কি পরিবর্তন আসবে?
বেশিরভাগ লোকই জানে যে আমাদের শরীরে সার্কুলার পদ্ধতিতে রক্ত আনার জন্য ও বের করার জন্য দুই ধরনের শিরা কাজ করে। একটি হলো ধমনী জালাল রঙের হয়ে থাকে। আর দ্বিতীয়টি হলো শিরা যা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। এই দুটি ছাড়াও আমাদের শরীরে আরেক প্রকার স্নায়ু হয়ে থাকে। যার সম্পর্কে অনেক কম লোকই জানে। এই স্নায়ুতে রক্ত নয় বরং এক তরল পদার্থ পাওয়া যায়, যার মাত্রা ১৭ লিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই তরল আমাদের ধমনী এবং শিরা থেকে বের হয়। যদি আমাদের শরীরে এই পদ্ধতি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে আমাদের শরীরে পানি এসে যাবে এবং পা ফুলে যাবে। এছাড়াও শরীরে ইনফেকশন হওয়ার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বামদিকে ফিরে ঘুমালে আমাদের শরীরে এই পদ্ধতিটি ভালোভাবে কাজ করে। যার ফলে রক্তে তাকা বিষাক্ত পদার্থ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। আমাদের শরীর থেকে টক্সিন খুব ভালোভাবে বের হয়ে যেতে পারে।
আর এই কারনেই আমাদের বামদিকে ফিরে ঘুমানো উচিত। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে বামদিকে ফিরে ঘুমানো উপকারি কথা বলা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন