হাইপারটেনশন যা হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ নামে পরিচিত। এটি একটি জটিল দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যার ফলে শরীরে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাথা ব্যাথা, দৃষ্টিশক্তি সমস্যা, বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়



রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে শুরুতেই যদি খাদ্য তালিকা তৈরি করা যায়, তবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে নেই, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়।


উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যে খাবারগুলো বাদ দিতে হবে


উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো দেহে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম জমা হওয়া। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের লবণ খাওয়া একেবারেই কমিয়ে ফেলতে হবে। অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাদ্য গুলো খাদ্য তালিকা থেকে বের করতে হবে। আমরা যে খাবার লবণ খেয়ে থাকি তাতে প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম থাকে। উচ্চ রক্তচাপে ভোগে রোগীদের কফি খাওয়া উচিত নয়। কফি খেলে সাময়িক সময়ের জন্য রক্তচাপ বেড়ে যায়। ফলে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই রক্তচাপ থাকলে অতিরিক্ত চা পান বা কফি পান করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এর পরিবর্তে প্রতিদিন ২-৩ কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। গ্রিন টি হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত পানীয়, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।

যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তারা আচার বা টমেটো সস জাতীয় খাবার একবারই খাবেন না। কারণ আচার বা সহজে চিনি এবং ক্ষতিকারক লবণ থাকে। যে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। সেই সাথে যে কোন ফাস্টফুড খাওয়া একেবারেই চলবে না এবং প্রক্রিয়াজাত পাতার প্যাকেট জাত জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা। কারণ এইসব খাবার রক্তচাপ অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনাকে সুস্থ থাকতে হলে বাড়িতে কম লবণ দিয়ে খাবার তৈরি করে খেতে হবে।

অ্যালকোহল বা সফট ড্রিংকস একদম খাওয়া যাবেনা। কারণ অ্যালকোহল বা সফট ড্রিংকসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি আছে। যে আপনার ওজন বাড়িয়ে তোলে। এর পরিবর্তে আপনি তাজা ফলের রস খেতে পারেন বা ডাবের জল খেতে পারেন। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগলে লাল মাংস আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এখানে লাল মাংস বলতে বোঝানো হয়েছে গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, ভেড়ার মাংস ইত্যাদি। কারণ লাল মাংসে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় থাকা রোগীদের পাউরুটি খাওয়া যাবেনা। আপাতদৃষ্টিতে পাউরুটি ক্ষতিকর না মনে হলেও, এই খাবারটি উচ্চ রক্তচাপে থাকা রোগীদের বিষ এর সমান। কারণ পাউরুটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় সোডিয়াম। যা হঠাৎ করে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই ব্লাড প্রেসারে থাকা রোগীদের পাউরুটি খাওয়া নিষেধ করা হয়। এর পরিবর্তে আপনি ঘরে বানানো আটার তৈরি রুটি খেতে পারেন।
 
উচ্চ রক্তচাপে থাকা রোগীদের চিনি গো চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া একদম বাদ দিতে হবে। কারন জিনি আমাদের দেহের ওজন বাড়িয়ে তোলে, ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এছাড়াও খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা আমাদের দেহে বেড়ে যায়। তাছাড়া যদি আপনাকে মিষ্টি খেতে হয় তাহলে আপনি খাঁটি খেজুরের গুড় বা মধুও খেতে পারেন। এতে আমাদের দেহে কোনরকম ক্ষতি হয় না।

বাড়িতে তৈরি করা সুপ আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত করা সুপ আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এতে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। ফলে প্রক্রিয়াজাত করা সুপ খেলে আমাদের তো কোনো উপকার হয় না বরং আমাদের রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে ক্ষতি করে।


রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত


রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে মেথি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আগের দিন রাতে খাবার জলে দু'কাপ মেথি ভিজিয়ে রাখুন, পরের দিন সকালে মেতেছে কে নিয়ে শুধু জল পান করুন। মেথি জল বিপাক ক্রিয়া কে উন্নত করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে যদি আপনি মেথির জল খেতে পারেন তাহলে আপনার উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া অন্যান্য অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

টক দই রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল LDL এর প্রভাব কমায়। যারা দুধ খেতে চান না তারা টক দই খেতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপে থাকা রোগীদের যদি টক দই খেতে পারেন তাহলে দ্রুত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে এই টক দইয়ের সাথে লবণ বা চিনি মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়। টক দই খাওয়ার উপকারিতা।

সব ধরনের ভিনিগার থেকে আপেল সিডার ভিনিগার সবচেয়ে উপকারী। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ভিনিগার শরীর থেকে টক্সিন উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়াও আপেল সিডার ভিনিগার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে একগ্লাস খাবার পানিতে 2 চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন। তবে আপেল সিডার ভিনিগার কেনার আগে আপনার এসিডের মাত্রা দেখে কিনতে হবে। ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস হল ক্যাপসিকাম। এতে অন্যান্য টক ফলের তুলনায় এন্টিঅক্সিডেন্ট বেশি। যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিনের খাবারে ক্যাপসিকাম বা অন্য কোন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রাখতে পারেন।

গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ও ফাইবার থাকায়, তা রক্ত পরিষ্কার করতে এবং রক্তে চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তত একটি গাজর রাখুন। তাহলে খুব সহজেই আপনি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। নিয়মিত গাজর খাওয়ার উপকারিতা।

রসুনে যে সালফার রয়েছে তা রক্তনালিতে নাইট্রিক সালফার উৎপন্ন করে। ফলে তাদের স্থিতিস্থাপকতা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে। যাদের সিস্টোলিক রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য রসুন খুব ভালো। রসুনে থাকায় লোসিং যৌগ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন। চিবিয়ে খেতে না পারলে রসুন কুচি কুচি করে গিলে খেতে পারেন। এতে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। রসুন খাওয়ার উপকারিতা।


এইসব খাবার গুলো যদি আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন তবে আপনার উচ্চ রক্তচাপ শীঘ্রই কমিয়ে ফেলতে পারবেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন