আমলকি কে অমৃত ফল বলা হয়। কারণ এই টকজাতীয় ফল এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। আমলকির বিভিন্ন ভেষজ গুণ হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। আমলকির উপকারিতা, আমলকির গুনাগুন।
![]() |
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা |
আমলকি রক্ত পরিষ্কার রাখে। আমলকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। হৃদযন্ত্র মজবুত রাখতে। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে আমলকি সাহায্য করে। চুল পড়া বন্ধ করতে আমলকি সাহায্য করে। এছাড়াও আমলকি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
আমলকি হল প্রকৃতির একটি বড় উপহার। কারণ আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি ইত্যাদি। একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, এক গ্লাস কমলার রসে যত পরিমাণ ভিটামিন সি আছে, তার ২০ গুন ভিটামিন সি থাকে আমলকির রসে। তাই পৃথিবীর যে কোনো ফলের তুলনায় ভিটামিন সি সবচেয়ে বেশি রয়েছে আমলকিতে।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমলকি ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। আধুনিক গবেষণায় আমলকি দেহের ফ্যাট কমানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। জানা গেছে পেটের সাথে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে আমলকি। কারণ আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং ফাইবার। আমলকি ওজন কিভাবে কমায় সেটা জানার আগে, আমাদের জানতে হবে ওজন কেন বাড়ে। ওজন বৃদ্ধির পেছনে মূলত তিনটি কারণ থাকে। যেমন : লো মেটাবলিক রেট, ফ্রি রেডিকেল এবং অসংযমী জীবনযাত্রা। আমলকি দেহের মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে দেহের ওজন বৃদ্ধি রোধ করে। আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফ্রি রেডিকেল ধ্বংস করে। আর অসংযমী জীবনযাত্রা হওয়ার কারণ হল অনেকেই অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলে এবং কোনো শারীরিক ব্যায়াম করে না। এক্ষেত্রে প্রথমেই খাদ্য পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এক্ষেত্রে আমলকির রস বেশ উপকারী। রাতে খাবার খাওয়ার আগে ৫ থেকে ১০ মিলিলিটার আমলকির রস খেলে সহজে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আমলকি চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। আমলকিতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ফাঙ্গাল উপাদান থাকায় খুশকি, অকালে চুল পড়া এবং চুলের গোড়া ফাটা ইত্যাদি রোধ করে। আমলকীর তেল চুলের জন্য বেশ উপকারী। পরিমাণমতো নারিকেল তেলের সঙ্গে শুকনো আমলকি মিশিয়ে গরম করুন। এরপর তেল ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করে নিয়মিত চুলে ব্যবহার করুন। এই তেল চুল পড়া বন্ধ করে, চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং চুল কালো রাখতে সাহায্য করে।
আমলকি বয়স ধরে রাখে। আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তাই প্রতিদিন একটি করে আমলকি খেলে শরীরের সার্বিক সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে। আর সার্বিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখলে বয়স ধরে রাখা সম্ভব। তাই সারা বছর আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করুন। আমলকির টক স্বাদের জন্য খেতে না পারলে, গরম পানিতে হালকা করে সেদ্ধ করে ভাতের সাথে খেতে পারেন।
আমলকি এনিমিয়া দূর করে। আমলকির রসের মধ্যে বিদ্যমান থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আমাদের গৃহীত খাদ্যদ্রব্যের আয়রন শোষণে সাহায্য করে। ফলে আমাদের খাবারের লৌহের ঘাটতি ফলে এনিমিয়া হওয়া দূর হয়। একটি কথা মনে রাখবেন, এনিমিয়া বেশিদিন চলতে থাকলে হৃদ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও সামান্য কাজে হাঁপিয়ে যাওয়া, শরীর দুর্বল লাগা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে আমলকি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের প্রতিদিন আমলকি খাওয়া উচিত।
আমলকি হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে। আমলকি দেহের কিছু প্রোটিন জাতীয় উপাদান এর উৎপাদন রোধ করে। যা অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা হৃদরোগের কারণ। হৃদ রোগীদের রক্তের সুগার এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমলকি বেশি উপকারী। যে সমস্ত ভেষজ উপাদান শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল LDL কমায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল HDL বাড়ায়, তাদের মধ্য আমলকি অন্যতম একটি ফল। এটি এতলেটিক ব্লাড জমতে বাধা দেয় এবং শরীরের রক্ত চলাচল ভালো রাখে।
আমলকি লিভার টক্সিন দূর করে। প্রতিদিন দুই বেলা ভাত খাওয়ার পর মাঝারি আকারের একটি আমলকী চিবিয়ে খান। এতে লিভার থেকে টক্সিন দূর হবে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। কাঁচা আমলকি না পেলে, শুকনো আমলকি ভিজিয়ে সেই জলটি খেতে পারেন।
এছাড়াও আমলকির অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত আমলকি খেলে অবশ্যই এর উপকারিতা পাবেন। তাই আমাদের প্রতিদিন আমলকি খাওয়া উচিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন