হতাশা একটি সাধারন কিন্তু খুব মারাত্মক একটি মানসিক ব্যাধি। যা আপনার চিন্তা, চেতনা ও কাজ কর্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা অনেক সময়ই ভাল না লাগা এবং হতাশাকে একই বলে মনে করি। কিন্তু এই দুটো একই নয়। ভালো না লাগা অর্থাৎ Sadness হচ্ছে সামরিক মন খারাপ, চা অল্প কিছু সময় পরেই ঠিক হয়ে যায়। অন্যদিকে হতাশা দীর্ঘকালীন সমস্যা। যখন আমরা আমাদের কোন আশা কি পূরণ করতে না পারি অর্থাৎ আমাদের মনের অবস্থা অনুযায়ী যেটার উপর আমাদের আবেগ ও অনুভূতি কাজ করে এমন জিনিস হতে হতাশা বা ডিপ্রেশন তৈরি হয়। এই হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই অনেক পন্থা অবলম্বন করে। কেউ কেউ আবার সিগারেট অথবা অ্যালকোহল নিয়ে থাকে, আবার অনেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। অনেকেই হয়তো জানেনা এই চিকিৎসা গুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
হতাশা দূর করার উপায়
দুশ্চিন্তা, হতাশা, ভয় তখনই আসে যখন নিজেকে একা মনে হয়। তাই পছন্দনীয় ও প্রয়োজনীয় কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন এবং হাসিখুশি বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা বলুন। হাসিখুশি বন্ধুদের সাথে সময় কাটান।
ভালো থাকার অভিনয় করুন। যত সমস্যা বা হতাশার মধ্যে থাকুন না কেন মুখে হাসি রাখুন। আর এমন একটি ভাব নিয়ে অভিনয় করুন, যেন আপনি বিন্দাস আছেন। দেখবেন অভিনয় করতে করতে নিজের ভেতরে ভালোলাগা প্রবেশ করবে। আপনি যদি দুশ্চিন্তা দূর করতে পারেন, তবে ভয় কেউ জয় করতে পারবেন।
দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়
আজ থেকে 23 বছর আগে একটি নিউজ এসেছিল যে, এইচএসসি পরীক্ষার্থী একজন ব্রিলিয়ান্ট শিক্ষার্থীর সে তার ব্রেনের মধ্যে একটি লক্ষ্য ঠিক করেছিল। সে একই টার্গেটে কি ছিল যে, তার এইচএসসি পরীক্ষায় ৯৮ শতাংশ নম্বর চায়। তার লক্ষ্য অনুযায়ী সে তার মনে সেসব সংরক্ষণ করে ফেলে। সে ভাবছিল, যখন আমার এইচএসসি পরীক্ষায় ৯৮ শতাংশ নম্বর আসবে তখন আমি এই ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হব। আরও এমন অনেক প্ল্যান করে যাচ্ছিল। পরীক্ষা হলো, রেজাল্টও আসলো, কিন্তু তার নাম্বার হলো ৯৬ শতাংশ। আর এই জন্যেই সেই ছেলেটা আত্মহত্যা করে ফেলল। আর এমন বলতে একজন আর দুইজন নয়, এমন অনেক আছে যারা এই কারণে আত্মহত্যা করেছে বা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু আমি যদি বলি ওই স্টুডেন্টদের কথা, যারা কম নাম্বার পাওয়ার জন্য হতাশায় চলে গিয়েছে, ক্লান্ত হয়ে গেছে, জীবনে হেরে গেছে, যার আত্মবিশ্বাস শূন্য হয়ে গিয়েছে। সে বুঝতে পারছে না তার পরবর্তীতে কি করা উচিত। এখন বর্তমানে এমন শিক্ষার্থী কত হতে পারে? লক্ষ কিংবা কোটির কাছাকাছি। যাদের জীবন খারাপ হতে চলেছে শুধুমাত্র একটি ভুল পদ্ধতিতে চলার কারণে।
উদাহরণ : আপনি মনে করুন একটি ক্রিকেটের খেলা চলছে। আপনি সেখানে ব্যাটিং করছেন। আপনি একজন ছাত্র, আপনার পিছনে কোন উইকেট নেই। মনে করুন এটি আপনার জীবন, আপনি এখানে ব্যাটিং করছেন। আপনার আশেপাশে কোন খেলোয়ার নেই। আপনার সামনে আপনার সম্পূর্ণ জীবন। যে একটির পর একটি ভল ফেলে যাচ্ছে আপনার সামনে। একটি বল আসলো আপনি ক্রিকেট ব্যাট ঘোরালেন। বলটা ছুটে গেল এবং বলটা পিছনে চলে গেল। এখন আপনি কি করবেন? আত্মহত্যা করবেন?
জীবন আসলে কি, জীবনটাকে বুঝার চেষ্টা করুন। জীবন ওই পর্যন্ত না যে পর্যন্ত আপনি ভাবছেন, যেখানে আপনার ভাবনা পড়ে আছে। জীবন হলো সেটি যেখানে আপনার ভাবনা পৌছাতে পারেনা। সেটি হল আসল জীবন। যা হয়েছে একটা বল ছুটে গেল। ওই বল টা আসলে কি ছিল, একটি সুযোগ ছিল। যা পরীক্ষার নাম্বার হিসেবে আপনার সামনে এসেছে। মনে করুন এসএসসি পরীক্ষা সামনে, আপনার জীবন আপনার দিকে একটি সুযোগ দিল অর্থাৎ বল করলো। এবং বলটি আপনার হাত থেকে চলে গেল। বলটি আপনার সুযোগ ছিল, যদি ভালো নম্বর আসতো তাহলে ভাল কিছু করার সুযোগ ছিল। আর যদি সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে কি আসা যায়। যেহেতু এই খেলায় কোন খেলোয়ার বা উইকেট নেই সুতরাং আপনি আউট হবেন না। ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না আপনি মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। যদি আপনি টিকে থাকতে পারেন তাহলে কেউ আপনাকে হারাতে পারবে না। জীবনের শুধু একটি কাজ সে একটার পর একটা বল করতে থাকবে। অর্থাৎ একটি সুযোগ আসলো কিন্তু হাতছাড়া হয়ে গেল, কোন ব্যাপার না দ্বিতীয় সুযোগ আসবে। আর এই রকম হাজারো সুযোগ আসবে জীবনে।
এই বল হল আপনার সুযোগ। কোনোটা ছোট সুযোগ আবার কোনোটা বড় সুযোগ। আপনি শুধু তৈরি থাকুন। বসে থেকে এটা ভাববেন না যে আমি শেষ হয়ে গেছি, আমার সব বরবাদ হয়ে গিয়েছে। শুধু আপনাকে খেলার মাঠে ঠিকে থাকতে হবে। একটা বল হাতছাড়া হয়ে গেলেও কোন কিছু আসা যায় না। যদি ব্যাটেবলে লাগতো তাহলে ভাল হয়ে যেত। কিন্তু বল না লাগলে আরো ভালো। দ্বিতীয় বল আসবে। খেলুন এবং নিজের খেয়াল জীবনের দিকে রাখুন। দ্বিতীয়বার সুযোগ আসবে দ্বিতীয়বার না হলে তৃতীয় বার সুযোগ আসবে। হয়তো আপনি পৃথিবীর চোখে ব্যর্থ হচ্ছেন। কিন্তু আপনি টিকে আছেন। আপনি জীবনের খেলাটা বুঝে ফেলেছেন। আপনি বুঝে গিয়েছেন যে একটা সুযোগে ব্যর্থ হলে জীবনে ব্যর্থ হয় না। একটা সুযোগ শেষ মানেই জীবন শেষ হয় না। আর যদি আপনি এটি বুঝতে পারেন তাহলে জীবনে আপনার হতাশা হবে না। আজকে যা হারিয়েছেন তা ছিল একটি সুযোগ, এমন হাজার সুযোগ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। শুধু আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
উপসংহার
আসলে সত্যটা হল আমাদের জীবনের সমস্যাই আমাদের ভবিষ্যতে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়। আজকে জেডি সমস্যা আগামীতে সেটি হাসির খোরাক। তাই জীবনে যতই সমস্যা আসুক না কেন সাহসিকতার সাথে তা দূর করে চলবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন