আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ এই এটা জানার চেষ্টা করে না যে, ব্রণ কেন হয় এবং এর ধরন কি? কারণ ব্রণের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের থাকে। যেমন : ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইট হেডস, ছোট ব্রণ এবং বড় ব্রণ। একটি বিষয় খেয়াল করে দেখবেন আপনার ত্বকে ব্রণ হওয়ার পর কালো রংয়ের কিছু দানাদার দেখা যায়। এটি ব্ল্যাকহেডস বা হোয়াইট হেডস নামে পরিচিত। ব্ল্যাকহেডস ত্বকের বাইরে এসে অক্সিজেন এর সংস্পর্শে কালো রং ধারণ করে। এবং হোয়াইটহেডস ত্বকের অভ্যন্তরে তাকে এবং সাদা বর্ণের হয়ে থাকে।
যখন ব্রণ ভালো করার কথা আসে তখন আমরা কিছু ক্রিমের উপর বেশি ভরসা করে থাকি। তবে একটি কথা মাথায় রাখবেন যে, যদি কিছু ব্যবহার করলে পিম্পল ভালো হয়ে যেত তাহলে আপনাকে আজ এই লেখাটি পড়তে হতো না। কিন্তু ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধুমাত্র খাওয়া-দাওয়া এবং লাইফ স্টাইলে কিছু পরিবর্তন এনে ব্রণের হাত থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ব্রণ দূর করার উপায়
আমাদের ত্বকের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ইন্টার্নাল অর্গান এর সাথে সংযুক্ত থাকে। এর ফলে আমরা যা খায় তার সরাসরি প্রভাব আমাদের ত্বকের উপর পড়ে। তাই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ছাড়া ব্রণের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে ব্রণ বৃদ্ধি ও হ্রাস করায় ভূমিকা রাখে। কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে ব্রণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। আবার কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো ব্রণের ইনফেকশন কমাতে কাজ করে।
- চিনিযুক্ত খাবার আমাদের ব্রণ বৃদ্ধি করে। যেমন : কেক, আইসক্রিম, চকলেট, মিষ্টি, কোলড্রিংস ইত্যাদি।
- দুধ জাতীয় খাবার আমাদের ব্রণ বৃদ্ধি করে। দুধ দিয়ে তৈরি করা খাবার যেমন : দই, চিজ, পনির, মাখন, আইসক্রিম, চকলেট ইত্যাদি।
- ভাজাঁপুরা ময়দা দিয়ে বানানো খাবার আমাদের বৃদ্ধি করে। যেমন : চিপস, পাস্তা, রুটি, জাঙ্কফুড ইত্যাদি।
যদি আপনার ব্রণের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এগুলো খাওয়া একদমই উচিত না। কারণ জাঙ্ক ফুড, চিনিযুক্ত খাবার, দই ইত্যাদি আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। যার ফলে আমাদের ত্বক তৈলাক্ত বেশি হয়। যার কারণে লোম ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ব্রণ হওয়ার সাথে সাথে ত্বকের উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়। যদি আপনার ত্বকে ব্রণ না থেকে থাকে তাহলেও চিনিযুক্ত খাবার এবং জাঙ্কফুট কম খাওয়া উচিত।
ব্রণ কেন হয়
ব্রণ সাধারণত বয়সন্ধিকালে হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। আবার কিছু ব্রণ ইনফেকশনের আকার ধারণ করে। আমাদের ত্বকে ছোট ছোট কোষ রয়েছে। আমাদের ত্বক থেকে প্রাকৃতিক ভাবে এক ধরনের তৈল নিহিত হয়। যখন আমাদের ত্বক পরিষ্কার থাকে তখন স্বাভাবিকভাবে হইল ত্বক থেকে বের হয়ে যেতে পারে। আবার যখন আমাদের ত্বক অপরিষ্কার থাকে তখন ঐতো ত্বক থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না। যার ফলে ওই তৈল আমাদের ত্বক থেকে নির্গত হয়ে বের হতে পারেনা। এবং পরবর্তীতে তা আমাদের ত্বকে ব্রণ আকারে বেরিয়ে আসে। যখন আমরা ভুল করে ব্রণ চাপ দিয়ে ফাটিয়ে ফেলি। তখন লোম ছিদ্র খুলে যায়। আর বাইরে থাকা ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে। আর তখন দ্রুত ব্রণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর তখন ত্বক আরো বেশি সংক্রমিত হয় এবং লাল ভাব হতে শুরু করে।
কিছু ব্রণ রয়েছে যেগুলো আকারে ছোট। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই ধরনের ব্রণ হয়ে থাকে। কিছু ব্রণ রয়েছে যেগুলো শক্ত বেদনাদায়ক এবং ত্বকের বাইরে এসে ফুলে ওঠে। আবার কিছু ব্রণ রয়েছে যেগুলো ত্বকের গভীরে পৌঁছায়। যেটি আকারে বড় এবং ব্যাথাদায়ক হয়।
ব্রণ দূর করতে যা করা উচিত
- যখন আমাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায় তখন আমাদের দেহের বিভিন্ন সিস্টেম কাজ করা বন্ধ করে দেই। এবং সেইসাথে চুলের ক্ষতি, দুর্বলতা, ব্রণ, মুখ কালো হয়ে যাওয়া, হার্টের রোগ, মাথা ব্যাথা, চোখে জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য আমাদের সব সময় ভালো দিক চিন্তা করতে হবে।
- রোদ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। সূর্যের রশ্মিতে থাকা ইউবি রেডিয়েশন ব্রণের অবস্থা খারাপ থেকে আরো খারাপ করে দেয়। এজন্য যতটুকু সম্ভব রোদ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
- ব্রণ হলে সেটিকে কোনরকম চাপ না দেওয়া। আমরা যখন কোন ব্রণ চাপ দিয়ে থাকি তখন সেটা বাহিরে ফাটার সাথে সাথে ভিতরে ফেঁটে যায়। যার ফলে বাইরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ভিতরে চলে যায়। ফলে ব্রণ আমাদের পুরো মুখে ছড়িয়ে যায়। আর এটিই সবচেয়ে বড় কারণ ব্রণ দ্রুত বাড়তে থাকার।
- আপনার ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করে নেবেন। কারণ সারাদিন ধুলাবালির মধ্যে থাকার জন্য সেগুলো আমাদের ত্বকে জমতে থাকে। এর কারণে ব্যাক্তিরই ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। এইজন্য রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ত্বক অবশ্যই পরিষ্কার করুন।
উপসংহার
ব্রণ যেমনই হোক না কেন যদি আপনি উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চলেন তাহলে এর থেকে আপনি দ্রুত মুক্তি পাবেন। উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে খুব সহজেই আপনি ব্রণ দূর করতে পারবেন। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে উপরোক্ত নিয়মগুলি ব্রণ দূর করতে বেশ কার্যকর। তাই সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন