![]() |
সজনে পাতার উপকারিতা |
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা সজনে পাতা কি অলৌকিক পাতা মনে করেন। অনেকেই সজনে কে মাল্টিভিটামিন এর উৎস মনে করেন। সজনে এর ইংরেজি নাম হল Drumstick Tree। শীতপ্রধান দেশ ছাড়া সারা পৃথিবীতেই এটি পাওয়া যায়। বারোমাসি সজিনে সারাবছরই ফলন দেয়। গাছে সবসময় ফুল এবং কচি পাতা দেখা যায়। ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের মতে সজনে ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আধুনিক বিজ্ঞানের ধারণাকে সমর্থন করে থাকে।
তাহলে চলুন জেনে নিই, সজনে পাতার অলৌকিক উপকারিতা সম্পর্কে এবং সজনে পাতা, ফুল, ফল ও ডাটার গুনাগুন সম্পর্কে
বিজ্ঞানীরা মনে করেন সজনে পাতা পুষ্টিগুণের আধার। নিরামিষভোজীরা সজনে পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকারী তা পেতে পারে। পরিমাণের ভিত্তিতে আলোচনা করলে, সজনে পাতায় কমলার মতো ভিটামিন সি, গাজরের চারগুণ ভিটামিন এ, কলার তিনগুণ পটাশিয়াম পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন যে, সজনে পাতায় ৩৮% আমিষ, ৬১% ম্যাগনেসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% আয়রন ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি সহ দেহের বহু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
সজনে পাতার বিভিন্ন উপকারিতা
সজনে পাতার রস হৃদরোগের চিকিৎসায় এবং রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সজনে পাতার রসে বহুমূত্র রোগ সারে। যারা এই রোগে আক্রান্ত তারা সজনে পাতার রস খেলে সুফল পাবেন। সজনে পাতার রসের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ লবণ মিশিয়ে খেলে বাচ্চাদের পেটে জমা গ্যাস অর্থাৎ এসিডিটি দূর হয়। এক টেবিল সজনে পাতার গুড়া থেকে বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় ৪০% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম, ২৩% আয়রন ও ভিটামিন এ পাওয়া যায়। প্রায় বেশিরভাগ মহিলারা ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের অভাবে ভুগে থাকেন, তার ফলে দেহের নানান ধরনের সমস্যা দেখা যায়। তাই যদি সজনে পাতার গুড়া প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে শরীরের ক্যালসিয়াম ও আয়রন জনিত সমস্যা দূর হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই দাঁতের মাড়ির সমস্যায় ভুগে থাকে, দাঁতের গোড়া ফুলে যাওয়া এবং পানি পড়া সমস্যা বর্তমানে অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এমন অবস্থায় সজনে পাতা গরম জলে ফুটিয়ে সেই জল কুলকুচি করতে পারলে সেই সমস্যা সেরে যায়।
বর্তমান যুগে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা প্রায় সব পরিবারেই দেখা যায়। কম বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে সজনে পাতার রস দুবেলা খাবার খাওয়ার আগে দুই চামচ করে খেতে পারলে ধীরে ধীরে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা কিন্তু এটি ব্যবহার করবেন না। ঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেকেই জ্বর এবং সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আবার অনেকেই আছে যারা সারা বছরেই সর্দিতে ভুগতে থাকেন। এক্ষেত্রে সজনে পাতার শাক খেলে যন্ত্রণাদায়ক জ্বর এবং সর্দি দূর হয়। সজনে পাতার রস এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। ক্ষতস্থানে সজনে পাতার পেস্ট লাগালে উপকার পাওয়া যায়। সজনে পাতা বেটে হলুদ, রসুন, গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে কুকুরের বিষ ধ্বংস হয়ে যায়। কুকুর কামড়ালে সজনে পাতা বেট এভাবে খেতে পারেন।
সজনে পাতা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়, তাই যারা দৃষ্টিশক্তি সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সজনে পাতা খেতে পারেন। আপনি চাইলে সজনের কচি পাতা শাঁক হিসেবে খেতে পারেন অথবা আপনি চাইলে পাতা বেটে খেতে পারেন। বর্তমানে আমাদের মধ্যে অনেকেরই গ্যাস্ট্রিক এসিডিটির সমস্যা দেখা যায়। এই ক্ষেত্রে সজনে পাতা বেশ উপকারী। সজনে পাতার বড়ি তৈরি করে প্রতিদিন খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। সজনে পাতার মতো ও সজনি ফুলেরো অনেক গুণাগুণ রয়েছে যেমন : সজনে ফুল দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে লিভারে পাথর দূর হয়। সজনে ফুলের রস হাঁপানি রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। সজনে ফুল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। সজনে ফুল হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। সজনে ফল নিয়মিত রান্না করে খেলে বাত ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সজনের কচি ফল কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও সজনে ফল লিভার দোষ নিবারণ হিসেবে কাজ করে থাকে। সজনে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান নিঃসরণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও শজনে মাথা ব্যাথা, মাইগ্রেন, পেট ব্যাথা ও চুল পড়া রোধ করতে সজনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
শরীরে রক্ত স্বল্পতা দেখা দিলে সজনে ডাঁটা নিয়মিত জল দিয়ে ফুটিয়ে খেলে তা দূর হয়। সজনে ফুল বা ডাটা তরকারি হিসেবে খেলে জলবসন্ত কিংবা গুটি বসন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন