বর্তমানে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে অনেকেই নিজের জন্য সময় রাখতে পারেন না। যার ফলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ। তবে, প্রতিদিনের ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব।

নিয়মিত হাঁটার উপকারিতা
নিয়মিত হাঁটার উপকারিতা



সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হলো প্রতিদিন হাঁটাচলা করা। হাঁটলে শরীরের বিভিন্ন পেশী গুলিতে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। দ্রুতহারে সেই অক্সিজেন পেশিতে পৌঁছে দিতে, শরীরের রক্ত সঞ্চালন আরো দ্রুত হতে থাকে। তাই প্রতিদিন কিছু সময় বের করে যদি হাটা যায়, তাহলে নানা রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। শরীর সুস্থ রাখতে হাটার কোন বিকল্প নেই। যেকোনো বয়সের মানুষ সারাদিন কিছু সময় হেঁটে নিজের শরীরকে সহজেই সুস্থ রাখতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটলে ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, হৃদরোগের সমস্যা ও ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং রাতে ঘুম ভালো হয়।


নিয়মিত হাঁটার উপকারিতা কি?


প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শুধুমাত্র কম খেয়ে বানা খেয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়, অলস জীবন যাপন করলে কখনোই উজন কমানো সম্ভব নয়। তাই, স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত হাঁটলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কারণ, প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে আমাদের শরীরের মেটাবলিজম প্রক্রিয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হয়। তবে দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাটতে হবে। আর এভাবে, সপ্তাহে ৫ দিন হাঁটা উচিত। সর্বোপরি, সপ্তাহে মোট ১২০ মিনিট হাঁটলেই হবে। তবে, এর থেকে বেশি হাঁটলে সমস্যা নেই, আবার এর থেকে কম হাঁটলে হাটা থেকে তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।

নিয়মিত হাঁটলে ভিটামিন ডি এর ভারসাম্য বজায় থাকে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকলে, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সকালে দিনের আলোতে হাঁটার অভ্যাস থাকলে, শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ হয়। ভিটামিন-ডি যেমন আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করে তেমনি ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনকে হ্রাস করে।

নিয়মিত হাঁটলে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত হাঁটলে যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তেমনি রক্তচাপ কমানোর মোক্ষম ঔষধ হল হাঁটাহাঁটি করা। নিয়মিত হাঁটলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা খুব একটা দেখা যায় না এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা নিয়মিত হাঁটলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

নিয়মিত হাঁটলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। হাঁটাহাঁটি করলে আমাদের শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে। বিশেষ করে সুগার প্রতিরোধ করতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে, শরীরের গ্লুকোজের মেটাবলিজম সঠিক হওয়া দরকার। আর, নিয়মিত হাঁটলে শরীরে গ্লুকোজ মেটাবলিজম বাড়ে। এজন্যই, ডায়াবেটিসের রোগীদের নিয়মিত হাঁটতে বলা হয়ে থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করা উচিত। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের নজর রাখতে হবে, খালি পেটে অথবা খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। আর একদিনে খুব বেশি হাটা উচিত নয়। ধীরে ধীরে হাঁটার অভ্যাস তৈরি করুন।

নিয়মিত হাটাহাটি করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। নিয়মিত হাঁটলে বৃদ্ধি পায় শারীরিক সক্ষমতা, বৃদ্ধি পায় হূদযন্ত্রের কর্মদক্ষতা। ফলে, হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও, হাটার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি পায়। ফলে, হৃদযন্ত্র এবং ফুসফুসের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

নিয়মিত হাঁটলে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ হয়। হাড়ের ক্ষয় রোগ অর্থাৎ অস্টিওপোরেসিস রোগে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে, অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিয়মিত হাঁটাচলা করলে হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা কমে যায়। বিশেষ করে মহিলাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যাথা বেড়ে যায়। তাই হাড়ের সংযোগস্থল সুস্থ রাখতে নিয়মিত হাঁটাচলা করার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়াও, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে জয়েন করবে তা অনেকটাই কমে যায়।

নিয়মিত হাঁটলে পায়ের পেশির শক্তি বৃদ্ধি হয়। হাটার সময় পাচল আর সাথে পায়ের আংগুল, দুহাত, শরীর ও কোমর নড়াচড়া হয়, ঘাড় ও কাঁধের ব্যায়াম হয়। যার ফলে পায়ের শক্তি বাড়ার সাথে সাথে নিয়মিত হাঁটলে বাত ব্যথার সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।

নিয়মিত হাঁটলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক মানুষের এই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে প্রবীণ মানুষদের ক্ষেত্রে স্মৃতি হারানোর লক্ষণ দেখা যায়। নিয়মিত হাঁটাচলা করলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। যার ফলে বয়স্কদের মধ্যে ভুলে যাওয়ার যে প্রবণতা থাকে, তা অনেকটাই কমে যায়।

নিয়মিত হাঁটলে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। British Journal of Cancer Study তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নিয়মিত হাঁটাচলা করলে খাদ্যনালীর নিচের অংশের ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৫২% কমে যায়। এছাড়া, অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

মন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে হাঁটাচলা করা। এছাড়াও মানসিক চাপ কমাতে, বিষন্নতার উপসর্গ কমাতে, বোধ শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে নিয়মিত হাঁটাচলা। ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নামক দুটি উপাদান নিঃসরণ হয় নিয়মিত হাঁটাচলা করলে। যার ফলে, ভালোলাগার অনুভূতি জাগ্রত হয়। বিষন্নতা কেটে গিয়ে মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে।




কোন সময় হাঁটা উচিত?


সকালে মনোরম পরিবেশে হেঁটে দিন শুরু করলে, শরীরে সতেজ ভাব বজায় থাকে। পাশাপাশি শরীরের মাংসপেশি অনেক বেশি শক্তিশালী হয় এবং কার্য ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়াও মানসিক চাপের প্রবণতা হ্রাস পায়। তাই আমাদের প্রতিদিন সকালে মনোরম পরিবেশে হাঁটা উচিত। এতে করে সকালের নির্মল হাওয়া আমাদের মধ্যে ভালোলাগা জাগ্রত করে। যারা দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন তাদের প্রতিদিন সকালে মনোরম পরিবেশে হাঁটা উচিত। এছাড়াও হাঁটার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে সকাল ৬-৮টার মধ্য হাঁটা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন