কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বিরক্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা। অনেকের টয়লেটে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় কিন্তু পেট পরিষ্কার হয় না। মলত্যাগ যদি সপ্তাহে তিনবারের কম অথবা পরিমাণে কম হয়, অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও মলত্যাগ যদি না হয় অথবা মহল অস্বাভাবিক রকমের শুকনা বা শক্ত হয় তাহলে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।

কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায়



বিভিন্ন কারনে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং খাদ্য অভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের পিছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ভালোভাবে জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।


কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ কী?


কোষ্ঠকাঠিন্য কি চিরতরে দূর করার জন্য আমাদের এই রোগের কারণ এবং লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন : ফাইবার জাতীয় খাবার কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। শাকসবজি ও ফলমূল কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পানি কম পরিমাণে পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। দুশ্চিন্তা করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম একেবারেই না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে ও ডায়াবেটিস হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অনেক দিন বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যথার ওষুধ সেবন করলে যেমন: ব্যথার ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ঔষধ, গ্যাস্ট্রিক অর্থাৎ এসিডিটির ঔষধ, ও যেসব ঔষধে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে এসব ঔষধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এছাড়াও স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আবারো কিডনির সমস্যা থাকলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।


কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলো কি?


কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ হলো শক্ত পায়খানা হওয়া, পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা, পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া, অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরেও পেট পরিষ্কার না হওয়া, মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভব করা এবং আঙ্গুরের বা অন্য কোনো মাধ্যমে পায়খানা বের করা।

দীর্ঘদিন ধরে যদি কোষ্ঠকাঠিন্য ভুগতে থাকেন এবং চিকিৎসা করানো না হয় তাহলে অনেক সমস্যা হতে পারে। যেমন : পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, পাইলস বা অর্শ হতে পারে, এনাল ফিসার হতে পারে, মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে, মানসিকভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে, অন্ত্রে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোলন ক্যান্সার বা টিউমার এর কারনে হয়, আর সময়মতো চিকিৎসা না করানো হলে এক্ষেত্রে অকাল মৃত্যু ঘটতে পারে।

তাহলে বুঝতেই পারছেন কোষ্ঠকাঠিন্য কে চিরতরে দূর করা দরকার নইলে জীবনযাপন কিন্তু কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।


কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায়


কোষ্ঠকাঠিন্য যারা ভুগছেন তাদের একটি খাবার এড়িয়ে যাওয়া দরকার যেমন দুধ। দুধ অথবা দুগ্ধজাতীয় খাবার অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে। এ ধরনের খাবারে আঁশ জাতীয় খাবার কম থাকে। তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। তবে আপনি চাইলে দুপুরে সামান্য পরিমাণে টক দই খেতে পারেন। তবে টক দই খাওয়ার সময় টক দইয়ের সাথে চিনি মেশানো যাবেনা আপনি চাইলে অল্প পরিমানে লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন। লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বৃদ্ধি করে দেয়। তাই এই জাতীয় খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।


সংরক্ষিত বা প্রক্রিয়া জাতীয় খাবারে জল শুকিয়ে ফেলা হয় ও লবণ বেশি পরিমাণে থাকে, ফলে এই ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বৃদ্ধি পাবে। তাই কম পরিমাণে এই ধরনের খাবার খেতে হবে। ভাজাপোড়া অর্থাৎ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, ও চপ সিঙ্গারার মত যত খাবার আছে, তা অন্ত্রের চলন কমিয়ে দেয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়। তাই এই ধরনের খাবার কম খাওয়া উচিত। বেকারি জাতীয় খাবার যেমন বিস্কুট, কেক ওবেসিটি জাতীয় খাবারে জলীয় অংশ এবং ফাইবার কম পরিমাণে থাকে। ফলে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের এই জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত।

আবার এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে যেমন পাকা কলা। পাকা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম, অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পাকা কলা খেতে পারেন। কমলায় রয়েছে উচ্চমাত্রার যুক্ত ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সারাদিন একটিবার দুটি কমলা খাওয়ার অভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে জুস করে নয় বরং কমলার কোয়া খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কমলায় যে ফাইবার থাকে তার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করবে শুধু তাই নয় কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করতে সাহায্য করবে। অনেকে ভুট্টা পছন্দ করতে নাও পারেন, কিন্তু ভুট্টা হত্যার পপকন যে কতটা স্বাস্থ্যকর খাবার তা আমাদের জানা প্রয়োজন। আর ভুট্টায় যে ফাইবার থাকে তার কারণে আমাদের খাদ্য তালিকায় ভুট্টা রাখা উচিত। এই ফাইবারের কারণে আপনার দেহের অনেক সমস্যা দূর হয় কিন্তু মাখনে ভরপুর ফ্যাট যুক্ত ভুট্টা খাবেন না। প্রয়োজন হলে বাড়িতেই তৈরি করে খেতে পারেন একদম সাধারন ভুট্টা। ভুট্টায় থাকা ফাইবার উপাদানটি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

যদিও আমাদের সাদা চাল খাওয়ার অভ্যাস, কিন্তু অল্প পরিমাণ লাল সালে তাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এছাড়াও লাল চাল সাদা চালের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে লাল চালের ভূমিকা অনেক বেশি। তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তাদের খাদ্য তালিকায় লাল চাল অবশ্যই রাখা উচিত।


তাহলে বুঝতেই পারছেন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য আমাদের ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশি বেশি পানি খাওয়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তাদের উপযুক্ত নিয়ম মেনে চলা উচিত।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন