আমাদের মধ্যে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, কাঁচা ডিম রান্না করা অথবা সিদ্ধ করার ডিমের চেয়ে পুষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে। যারা স্বাস্থ্য চর্চা করেন, জিমে যান, ওজন বাড়ান তারা সাধারণত কাঁচা ডিম খেয়ে থাকেন। এই কাঁচা ডিম খেলে নাকি শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি হয় এবং শরীর ভালো থাকে। এই কথাটি কি আদৌ সত্য? নাকি কাঁচা ডিম খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।

কাঁচা ডিম খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা ডিম খাওয়ার উপকারিতা



ডিমে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুণ থাকার কারণে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত একটা ডিম খাওয়া উচিত। ডিম যেভাবেই কারণ সেটি শরীরের জন্য খুব উপকারী। ডিম আপনি যেকোনো অবস্থায় খেতে পারেন। সকালে দুপুরে রাতে যে কোন সময় খেতে পারেন ভরা পেটে কিংবা খালি পেটে খেতে পারে। আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী সকালের নাস্তায় একটি ডিম খেতে পারেন। ডিমে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ইত্যাদি। ডিম খেলে আমাদের শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেল এর চাহিদা অনেকটাই পূর্ণ হয়ে যায়। তাই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়া উচিত। তাহলে চলুন জেনে নিই, কাঁচা ডিম খাওয়া আদৌ উচিত কিনা।


কাঁচা ডিম খাওয়ার উপকারিতা কি কি


কাঁচা ডিম খেলে বেশি শক্তি বেশি প্রোটিন পাওয়া যাবে সেটি তো নয় বরং কাঁচা ডিম খেলে আপনি কিন্তু নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। সমস্যাগুলো হলো ওজন কমে যাওয়া, জিব্বা শুকিয়ে যাওয়া, তোকে প্রদাহের সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।

কাঁচা ডিম রান্না করার ডিমের মতো কিন্তু সহজে হজম হয় না। ফলে হজমে সমস্যা দেখা দেয় যদি আপনি কাঁচা ডিম খান। ডিমের সাদা অংশ দিয়ে তাকে এলবুমিন নামের প্রোটিন। কাঁচা অবস্থায় ডিমের সাদা অংশে পরিপাক বিরোধী অংশ থাকে যা উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সিদ্ধ বা ভাঁজা ডিম গ্রহণযোগ্য। ফলে আপনার হজমের সুবিধার্থে কাঁচা ডিম খাওয়া কিন্তু একেবারেই উচিত নয়।

কাঁচা ডিম খেলে ডিমের বায়োটিক ভিটামিন নামের এক ধরনের ভিটামিন থেকে বঞ্চিত হয়। এই বায়োটিক ডিমের সাদা অংশে উপস্থিত প্রোটিন এভিডিন সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। এভিডিন বায়ু পাক তন্ত্রের শোষিত হয় না। কিন্তু উত্তাপে এই যুক্ত মিশ্রণটি ভেঙে যাই এবং বায়টিক পৃথক হয়ে যায়। এবং তখন বায়োটিন পৃথক তন্ত্রে শোষিত হতে পারে। গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিসরা বলছেন, কাঁচা ডিম খেলে শরীরে বায়োটিনের অভাব হতে পারে। বায়োটিন এ অভাব যুক্ত রোগের নাম 'Egg White Injury'। সুতরাং সে দিক থেকে দেখলে ও কাঁচা ডিম খাওয়া উচিত নয়।

এছাড়াও আরও অনেক সমস্যা আছে। যেমন খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন ব্যাকটেরিয়ার উপদ্রব বেশি হচ্ছে এই কাঁচা ডিমে। এরকম একটি ব্যাকটেরিয়ার নাম হল সালমোনেলা। যা ডিমের খোসাই অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে ডিমের ভিতর ঢুকে পড়ার ক্ষমতা রাখে। আর সালমোনেলা যুক্ত ডিম খেলে পেটের ব্যথা, বমি বমি ভাব, পেটের নানা ধরনের রোগ থেকে শুরু করে টাইফয়েড পর্যন্ত হতে পারে। অথচ ডিম ভালো করে রান্না করলে অর্থাৎ 5 থেকে 7 মিনিট গরম ভাত সেদ্ধ করলে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু দুই থেকে তিন মিনিট গরম করে অমলেট খেলে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস নাও হতে পারে। যেহেতু সব ডিমের সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে না তাই এই নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো সেরকম কোনো কারণ নেই। শুধু অপরিষ্কার জায়গায় পড়ে থাকা ডিম এর মধ্যেই এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া দেখতে পাওয়া যায়।




সুতরাং আমরা জানতে পারলাম কাঁচা ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। সেই কারণে একটু সেদ্ধ করে হলেও ডিম খাওয়া উচিত। কাঁচা ডিম যারা খেয়ে থাকেন তার একটু সাবধানতা অবলম্বন করুন। নানারকম সমস্যা কিন্তু এর থেকে হতে পারে। ডিমের সেদ্ধ খান অথবা ভেজে খান কিন্তু একেবারে কাঁচা ডিম খাওয়া উচিত নয়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন