ক্লান্তিতে এক কাপ চা মুহূর্তে চাঙ্গা করে দেই শরীর ও মন। তবে আপনার কাপের চার যদি হয় গ্রীন টি, তাহলে এটি আপনাকে শুধু সতেজতায় দেবেনা পাশাপাশি দেবে আরো অনেক কিছু। গ্রিন টি এর উপকারিতা সম্পর্কে জানব।


গ্রিন টি এর উপকারিতা ও গুনাগুন
গ্রিন টি এর উপকারিতা ও গুনাগুন

গ্রিন টি প্রথমে ছিল শুধুমাত্র একটি ওষুধ। তারপর তা পানীয়তে পরিণত হয়েছে। গ্রিন টি তে রয়েছে শত শত গুণ। গবেষকদের মতে গ্রিন টি আশ্চর্যজনক ভাবে দ্রুত কাজ করতে পারে। চা তো আমরা প্রতিদিন খেয়েই থাকি, তবে সঠিক নিয়ম মেনে যদি চা এর পরিবর্তে গ্রিন টি খাওয়া যায় তাহলে অনেক পরিবর্তন ঘটবে আমাদের শরীরে। তাহলে চলুন জেনে নিই, গ্রিন টি এর উপকারিতা সম্পর্কে।



গ্রিন টি কি



গ্রিন টি যে গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করা হয় তার নাম হলো Camellia Sinensis। আমরা যে সাধারণ চা পান করে থাকি তার থেকে গ্রিন টি'র প্রস্তুতকরণ ভিন্ন। গ্রিন টি সর্বপ্রথম আবিষ্কার হয় চীনে এবং পরবর্তীতে এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় তা ছড়িয়ে পড়ে।



গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম


গ্রীন টি তে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা সবদিক থেকেই শরীর চাঙ্গা রাখে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরের ওজন কমায় অর্থাৎ অতিরিক্ত চর্বি কমায় এবং গ্রিন টি খেলে শরীরে ভালোভাবে রক্ত চলাচল করে। এছাড়াও গ্রিন টি পেট পরিষ্কার রাখে এবং মস্তিস্ককে সচল রাখে। এই তথ্যগুলো বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে জানা গিয়েছে।


সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি শীতকালের ঠান্ডা জ্বর রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও গ্রিন টি পান করলে মানুষের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হ্রাস পায়। তবে অবশ্যই সঠিক নিয়মে খেতে হবে। গ্রিন টি কি, গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক নিয়ম, গ্রিন টি নিয়মিত খাওয়ার উপকারিতা।



গ্রিন টি এর উপকারিতা


গ্রিন টি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। আমাদের অনেকেরই ব্রাশ করার পরেও মুখে দুর্গন্ধ থেকে যায়। যার ফলে অন্যদের সাথে কথা বলার বিরম্বনায় পড়তে হয়। আবার অনেকেই অজান্তেই অন্যের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে সকালের নাস্তা করার 30 মিনিট পর, এক কাপ গ্রিন টি খেলে মুখের ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। গ্রিন টি'র মধ্যে থাকা এন্টি ইনফেক্টিভ প্রপার্টি ব্যক্তিদের সঙ্গে লড়াই করে। শুধু মুখের দুর্গন্ধ হয় নয়, গ্রিন টি আপনার দাঁত কে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। গ্রিন টি দাঁতে কেভিটি জমতে বাধা দেয়।


গ্রিন টি হার্টের জন্য খুবই উপকারী। যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য গ্রিন টি খুবই উপকারী। গ্রিন টি আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে। এছাড়াও গ্রিন টি আপনার কোলেস্টরেল পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। গ্রিন টি এর মধ্যে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলো আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও গ্রিন টি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।


গ্রিন টি আপনার মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের নানা রোগ যেমন alzheimer, পারকিনসন রোগ সহ নানা ধরনের রোগকে গ্রিন টি-এর কেটেচিন নামক উপাদান প্রতিহত করে থাকে। গ্রীন ট্রি আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ব্যায়াম করার 30 মিনিট আগে এক কাপ গ্রিন টি খেলে ব্যায়াম করার সময় চাঙ্গা অনুভূত হবে। গ্রিন টি আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। গ্রিন টি তে থাকা ক্যাফিন আমাদের এনার্জি লেভেল কেও বৃদ্ধি করে। যেকোনো কাজের চাপে ১ কাপ গ্রিন টি খেয়ে নিতে পারেন।


গ্রিন টি হজমশক্তি বাড়ায় এবং অতিরিক্ত চর্বি কমায়। গ্রিন টি তে থাকা কেটেচিন আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও গ্রিন টি আপনার অতিরিক্ত মেদ কমাতে জাদুর মত কাজ করবে। ২০০৮ সালের আমেরিকান এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি খেয়ে মাত্র ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে অন্যদের তুলনায় ১৯% বেশি ফ্যাট বার্ন হতে দেখা গেছে। আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক ভাবে তাপ উৎপন্ন হয়, গ্রিন টি খেলে শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে থাকে। এইতা বাড়ার কারণে শরীর থেকে ক্যালোরি পোড়ে। আর ক্যালরি পুরা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্রিন টি আসলেই ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে যদি ব্যায়াম না করে গ্রিন টি পান করা হয় তবে এটি খুব একটা কাজে দেবে না। ব্যায়াম ও গ্রিন টি পান করা একসাথে চালিয়ে গেলে ওজন কমবে দ্রুত হারে।


গ্রিন টি তারুণ্য ধরে রাখে। গ্রীন টি তে রয়েছে একজন এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বাধ্যক্য গতিকে ধীর করে এবং আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। গ্রিন টি চোখের নিচে ফোলা ভাব এবং চোখের নিচে কালো দাগ কমাতে দারুণ কার্যকর। এর জন্য ব্যবহৃত গ্রিন টি প্যাকেট ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে 10 মিনিট পর চোখের নিচে লাগালে তা চলে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি ব্রণের সমস্যা সমাধানে খুব কার্যকরী। গ্রিন টি ত্বকে কোনো রকম দাগ তৈরি করা ছাড়াই ব্রণ দূর করে। গ্রিন টি দেহের কোষ কে সজীব রাখে, ফলে আপনি দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন। কারণ গ্রিন টির মধ্যে উপস্থিত থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্রিন টি আপনার চেহারার উজ্জলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।


গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গ্রীন টি'র সবচেয়ে বেশি উপকারী তা হচ্ছে এটি আপনার জীবনি শক্তি বৃদ্ধি করে। হাজারো গবেষণায় এই একই তথ্য উঠে এসেছে যে, গ্রিন টি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আপনাকে সুস্থ এবং সবল রাখে। এছাড়াও গ্রিন টি কিডনি রোগের জন্য খুবই উপকারী। গ্রিন টি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ডিপ্রেশন দূর করে। প্রাকৃতিকভাবে থাইমিন অ্যামাইনো এসিড এই গ্রিন টি তে পাওয়া যায়। এই উপাদান দুশ্চিন্তা এবং হতাশা কমাতে সাহায্য করে।



সুতরাং আমরা বুঝতেই পারলাম গ্রিন টি আমাদের জন্য খুবই উপকারী অর্থাৎ গ্রিন টি এর উপকারিতা। তাই আমরা যেন সুস্থ থাকতে চাই তাদের অবশ্যই প্রতিদিন গ্রিন টি খাওয়া উচিত। এই করোনা কালীন সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গ্রিন টি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন