ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই কথা আমরা সবাই জানি। ধূমপান ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয় শরীরের সব অঙ্গ। ধূমপানের কুফল হিসেবে ফুসফুসে ক্যান্সার, হার্টের রক্তনালী সরু হয়ে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা, যৌন ক্ষমতা হ্রাসসহ নানা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তার পরেও প্রায় ১.৩ বিলিয়ন এর বেশী মানুষ নিয়মিত ধূমপান করে থাকেন। তবে, আপনার, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর শরীরে কি কি পরিবর্তন আসবে তা আমরা জানবো এবং কিভাবে ধূমপান ত্যাগ করা যায় সেই বিষয়ে জানব। ধূমপান ছাড়ার উপায় সম্পর্কে জেনে নেন।

ধূমপান ত্যাগ করার সহজ ও কার্যকরী উপায়
ধূমপান ত্যাগ করার সহজ ও কার্যকরী উপায় 


ধূমপান ত্যাগ করার পর কি কি উপকারিতা ও অপকারিতা হয়


  • ধূমপান ত্যাগ করার ২০ মিনিট পর রক্তচাপ কমে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়। হাত ও পায়ের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। সিলেটে থাকা নিকোটিন আমাদের হার্ট রেট বাড়ায় এবং ধমনী প্রশস্ত করে।
  • ধূমপান ত্যাগ করার ২ ঘন্টা পর শরীরের নিকোটিন এর চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে রাগ, হতাশা অস্থিরতা ইত্যাদি অনুভব হতে থাকে। এমনকি ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
  • সিগারেট ত্যাগ করার ৮ ঘন্টার পর আপনার শরীরে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ৫০% কমে যাবে। অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায় ফুসফুস থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর হবে।
  • ধূমপান ত্যাগ করার ৪৮ ঘন্টা পর ফুসফুসে জমে থাকা নিকোটিন শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। ফলে গ্রান এবং স্বাদবোধ বাড়বে।
  • ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ৩ দিন পর আপনার ব্রঞ্চিয়াল প্রশস্ত হবে। ফলে অনেক স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস চালাতে পারবেন, এনার্জি ফিরে আসবে এবং হতাশা কমবে। তবে নিকোটিনের অভাবে মাথাব্যথাসহ মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু কয়েকদিন পর এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • ধূমপান ত্যাগ করার ১ মাস পর ফুসফুসে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন হয়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে হাঁটা-চলার সময় যে দুর্বলতা অনুভব করতেন তা দূর হয় যাবে। এছাড়াও ডায়াবেটিস, ক্যানসার ইত্যাদি রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও কমতে থাকবে। এই সময়টাকে বুঝতে পারবেন আপনার আর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে না। ধূমপানের কারণে যে খুসখুসে কাশি হতো তাও অনেক কমে এসেছে।
  • ধূমপান ত্যাগ করার ১ বছর পর যারা কোনদিন ধূমপান করে নি, তাদের তুলনায় আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে দ্বিগুণ। ধূমপান ত্যাগ করার ১ বছর পর স্ট্রোকে আক্রান্ত ঝুঁকি কমে যায়। কোনো দিন ধূমপান না করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি যেমন থাকে পাঁচ বছর পর তেমনি ঝুঁকি কমে আসবে। ধুমপান করলে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি থেকে ফিরে আসতে ১০ বছর সময় লাগে। ধূমপান ত্যাগ করার ১০ বছর পর, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এতটাই কমে যায় যে কখনো সে ধূমপান করে নি।


ধূমপান ত্যাগ করার আগে প্রস্তুতি


যদি আপনি ধূমপানে আসক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে হঠাৎ করে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া একটি কঠিন কাজ। তাই ধূমপান ত্যাগ করার আগে প্রথমে কিছু পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিত। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন আপনি ধূমপান ত্যাগ করতে চাইছেন। এটি হতে পারে আপনার নিজের স্বাস্থ্যের জন্য অথবা পরিবারের ভালোর জন্য। এর মাধ্যমে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব অথবা পরিবারকে জানিয়ে দিতে পারেন যে আপনি ধূমপান ছেড়ে দিতে যাচ্ছেন। ফলে পরবর্তী কোন সময়ে তারা ধূমপান করার সময় আপনাকে ধূমপান করার কথা বলবে না।

ধূমপান ছাড়ার পর সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয় সেটি হচ্ছে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা। এটি হয় মূলত রক্তে নিকোটিন এর অভাবে। আসলে, ধুমপান করতে করতে আমাদের শরীরে নিকোটিনের একটি নির্দিষ্ট চাহিদা হয়ে যায়। আর শরীর যখন ঐ নিকোটিন থেকে বঞ্চিত হয়, তখন নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই জন্য আপনাকে নিকোটিনের জন্য ধূমপান ছাড়া অন্য কোন নিকোটিন জাতীয় খাবার খেতে পারেন। যেমন বাজারে অনেক কম নিকোটিন যুক্ত চকলেট এবং খাবার পাওয়া যায়। যখন দেখবেন ধূমপান করার জন্য আপনার শরীর কেমন করছে, তখনই সেটি খাওয়া শুরু করুন। এতে করে ধীরে ধীরে ধুমপানের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।


ধূমপান ত্যাগ করার উপায়


প্রথমেই এটা মনে রাখা জরুরী যে, ধূমপান ছাড়ার জন্য বিশেষ কোনো উপায় নেই। ধূমপান ত্যাগ করার জন্য নিজের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। তবে আপনি চাইলে বেশ কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন, যেন প্রক্রিয়াটা সহজ হয়। একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, ১ সিগারেট পান করার মাধ্যমে আপনি ৭০০০ ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল আপনি নিজের শরীরে নিচ্ছেন। এই কেমিক্যাল গুলোর মধ্যে ৭০ টি সরাসরি ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত।

ধূমপান ত্যাগ করার সহায়ক হিসেবে রয়েছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক উপায়। ধূমপান বিষয়ক গবেষকরা ধূমপান ত্যাগ করার জন্য বেশকিছু পদ্ধতির কথা বলেছেন।

  1. শারীরিক ব্যায়াম আপনার জন্য বিশেষ কার্যকরী। আপনাকে চিন্তা ভাবনা করে একটি রুটিন তৈরি করতে হবে, যেটি আপনাকে সারাদিনের জন্য এই আসক্তি থেকে মুক্ত রাখবে। যদি আপনি নিজেকে ভাবেন আমি একজন ধূমপায়ী না, তাহলে আপনাকে আপনার কাজের মাধ্যমেই এটাকে প্রকাশ করতে হবে। আপনার রুটিন হিসেবে যা আপনি করতে পারেন সেটি হলো : আপনার যখন এই ধূমপান করার ইচ্ছা জাগবে, ঠিক তখনই আপনি ১০ টি পুশ আপ এবং লম্বা করে শ্বাস নেবেন। তারপর এক গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনি ততবার করতে পারেন, যতবার আপনার ধূমপান করার ইচ্ছা হবে। শুধুমাত্র এটি করি আপনি আপনার ধূমপান করার ইচ্ছা কে নষ্ট করে ফেলতে পারবেন। আপনি শুধু এটি করে দেখুন, পরিবর্তনটা আপনি নিজেই দেখতে পারবেন।
  2. ধূমপান ত্যাগের ঔষধ গ্রহন করতে পারেন। ধূমপান ত্যাগ করার জন্য কিছু নিকোটিন বিহীন উপায় ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, 'Chintix' নামক ঔষধ যা বাজারে পাওয়া যায়। ধূমপান ত্যাগ করার পর প্রথম কয়েক মাস এই ঔষধ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। 'Zyban' হচ্ছে এই ধরনের ধূমপান ত্যাগ করার আরও একটি কার্যকরী ঔষধ। এইগুলো আপনার মস্তিষ্কে নিকোটিনের ক্রিয়া করতে বাধা দেয়। এর ফলে আপনি খুব দ্রুত ধূমপানের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
  3. খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে থাকুন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ ধূমপায়ী প্রথমদিকে কোন বন্ধু বা ব্যক্তি দ্বারা ধূমপান করতে প্রলুব্ধ হয়ে থাকে। আবার যখন আপনি ধূমপান ত্যাগের জন্য সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেই মানুষগুলো আবার আপনার ধূমপান ত্যাগের সংকল্পে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আপনি যাদের সাথে চলাফেরা করেন তারা যদি ধূমপায়ী হয়, ফলে তাদের ধূমপান থেকে আপনার ধূমপান করতে ইচ্ছা হবে। কিছু কিছু সময় তারা আপনাকে ধূমপান করতে জোর করতে পারে। তাই আপনি যখন ধূমপান করবেন না সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন আপনাকে এই ধরনের সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে হবে।


আমরা জানি, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। উপরুক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি সহজেই ধূমপান ত্যাগ করতে পারবেন এবং ধূমপানের কুফল গুলো জানলে ধূমপান ত্যাগ করতে সহজ হবে। ধূমপান আসক্তির ত্যাগ করার খুবই কার্যকরী ভূমিকা এগুলো। তাই সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন