এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত একটি রোগের নাম। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে এই রোগে ভুগে থাকি। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিরতরে গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা দূর করা যায়।

এসিডিটি দূর করার উপায়
এসিডিটি দূর করার উপায়



এই সম্পূর্ণ লেখাটায় আমরা জানব, গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ কি? গ্যাস্ট্রিক কেন হয়? গ্যাস্ট্রিক চিরতরে দূর করার কিছু উপায় সম্পর্কে।


এসিডিটির লক্ষণ কি? গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ কি?

গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা আর কিছু লক্ষণ রয়েছে। কিন্তু সবার এই যে একই রকম লক্ষণ দেখা দিবে তা কিন্তু নয়। সাধারণত বুকের উপরের দিকে হালকা ব্যথা হয় আবার কোনো কোনো সময় তীব্র ব্যথাও দেখা যায়। কারো কারো পেটে গুড়গুড় আওয়াজ হয়। একে গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে পেপটিক আলসার বলে। তবে ব্যথার ক্ষেত্রে কোনটি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা এবং কোনটি অন্য ব্যাথা সেটি বোঝার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

এটি এক ধরনের পরিপাক সংক্রান্ত সমস্যা। যে আমাদের পাকস্থলী তে অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন হওয়ার দরুন হয়ে থাকে। যখন পাকস্থলীতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন হয়, তখন সাধারণ পর্যায়ের নানারকম উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন : বুক জ্বালা, বুকে ব্যাথা, মুখ টক হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, পেট ফেপে যাওয়া, হিচকি উঠা, বিনা কারণে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, বিরক্তি বোধ করা ইত্যাদি। সবার ক্ষেত্রে সব রকম উপসর্গ দেখা যায় না। একেকজন একেক রকম সমস্যায় ভুগে থাকেন।



এসিডিটি কেন হয়? গ্যাস্ট্রিক কেন হয়?

বয়সভেদে গ্যাস্টিকের সমস্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে। দেখা যায় আমরা নিয়মিত সময় মত খাবার খায় না। রাতের খাবার খাওয়ার পরে সকালে আমরা অনেক দেরিতে ঘুম থেকে উঠি। নাস্তা খেতে খেতে এগারোটা বারোটা বেজে যায়। কেউ কেউ তো আবার একেবারে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। এতে করে খাবারের সময় এর মাঝে অনেক বড় ব্যবধান হয়ে যায়। আবার অনেকে আমরা অনেক রাত করে খাবার খাই। এইটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণ। এছাড়াও, দুশ্চিন্তা, অতিভুজ, ভাজাপোড়া, কোলড্রিংস, জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি কারনে এই সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়।

অনেক সময় আমরা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, ওমিপ্রাজল শ্রেণীর বিভিন্ন এলোপ্যাথিক বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন? এগুলো অতিরিক্ত সেবনে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। তাই ওষুধের ওপর নির্ভর যোগী না হয়ে খাবারের উপর মনোযোগ দিন। যেসব খাবার গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সহযোগিতা করে সেসব খাবার তালিকায় রাখুন। যারা ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত গ্যাস্টিকের ঔষধ সেবন করে থাকেন, তারা নিচে দেওয়া প্রাকৃতিক উপাদানগুলো খেতে পারেন। পাশাপাশি এর আরো অনেক উপকারীতা তো থাকছেই।


১/ আজওয়াইন বা জোয়ান

ক্ষুদ্র এই বীজের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অনেক বড় বড় গুণ। পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন বদহজম, বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব, কিংবা পেট ভার হয়ে থাকে সব সময় কি আপনাকে ভোগাচ্ছে?
অনেক সময় আমরা এমন কিছু খেয়ে ফেলি, যার ফলে আমাদের পাচনতন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। বিভিন্ন জাঙ্কফুড এবং এমন সব খাবার খেয়ে ফেলি যার মধ্যে ফাইবার এর মাত্রা খুবই কম। যারা সব সময় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা যদি এক চা-চামচ জোয়ান একলাছ পানিতে ভিজিয়ে খান, তবে গ্যাস্টিকের সমস্যা সহজেই দূর হবে। জোয়ানে থাকা থাইমুল নামক উপাদান, পাকস্থলী থেকে গ্যাস্টিক নিঃসরণে সাহায্য করে। এর ফলে খাবার সহজে হজম হয়। জোয়ান কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রেহাই দেয়। এছাড়াও জীবন যেমন মুখকে তরতাজা রাখে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে তেমনি এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন বুকের সঙ্গে লড়াই করে। জোয়ান হলো মিশরের স্থানীয় একটি মসলা। কিন্তু আজ তা ভারতীয় জনপ্রিয় মসলার মধ্যে একটি বলে স্বীকৃত হয়েছে। আপনি আপনার আশেপাশের মসলার দোকান এর সহযোগী পেয়ে যাবেন। শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।


২/ হিং

ইতিহাস থেকে জানা যায় রোমান সাম্রাজ্যের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করার জন্য হিং ব্যবহার করা হতো। আজও হিং ব্যবহার করা হয় ঝুল এবং আচারকে সুস্বাদু করার জন্য। আধ চা-চামচ হীন এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়। হিং যেসব ব্যাকটেরিয়া এসিডিটি উৎপন্ন করে, তাদের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। ফলে প্রাকৃতিক ভাবেই দূর হয় গ্যাস্ট্রিক। এটি পাকস্থলীর গ্যাস এবং স্থূলতাও কমায়।


৩/ আদা

অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার হল আদা। এই উপাদান গ্যাসের সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া, হজমের সমস্যা এবং এসিডিটির সমস্যা দ্রুত সমাধানে সক্ষম। পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাস হলে কাঁচা আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খান। দেখবেন গ্যাসের সমস্যা দ্রুত দূর হবে। আদা চা হজমে সাহায্য করে। যখনই পেটে গ্যাস হবে তখন এক চা-চামচ আদা কুচি সামান্য লেবুর রস দিয়ে চিবিয়ে খেলে ধীরে ধীরে এসিডিটি দূর হয়ে যাবে। এছাড়া আর বেশি এসিডিটি হলে দুই চা-চামচ আদা রস হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দ্রুত দূর হবে।




এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব বেশী কঠিন কিছু নয়। শুধু একটু নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। উল্লেখিত খাবার গুলোর সঙ্গে আজ জাতীয় খাবার খাওয়া শুরু করুন। তাহলে দেখবেন আপনাকে আর কোন দিনেও অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগতে হবে না।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন