মধুর রয়েছে অনেক উপকারিতা। মধু যেমন রোগ প্রতিরোধ গড়তে সহায়তা করে তেমনি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে থাকে। মধু শরীরের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন মধু খেলে অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমরা জানবো মধুর উপকারিতা সম্পর্কে, মধু খাওয়ার অপকারিতা এবং মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।

মধুর উপকারিতা
মধুর উপকারিতা


মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। মধু আমাদের জন্য খুবই উপকারী। মধুতে তাকা উপাদান আমাদের দেহের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নিই, মধুর উপকারিতা সম্পর্কে।


মধুর উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকেই মধু ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আদিকাল থেকেই মানুষ মিষ্টি খাদ্য হিসেবে ও চিকিৎসার জন্য মধু ব্যবহার করে আসছে। আমাদের শরীরের সুস্থতায় মধুর উপকারিতা অতুলনীয়। মধুতে প্রায় ৪৫ টির বেশি খাদ্য উপাদান রয়েছে। মধুতে সাধারণত কোনো চর্বি বা প্রোটিন থাকে না । মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। মধুর উপকারিতা গুলো কি কি?

  • মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু দেহে তাপ ও শক্তি যুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
  • মধু হজমে সহায়তা করে। মধুতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। মধুতে তাকে ড্রিস্টিক নামক উপাদান তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে।
  • মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায়। মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এটি ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা খেতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং এসিডিটি দূর হয়।
  • রক্তশূন্যতায় মধু বেশ কার্যকর। মধু রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে। ফলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। কারণ মধুমিতাকে প্রচুর পরিমাণ কপাট লৌহ।
  • মধু ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময় করে। যারা ফুসফুসের রোগ এবং শ্বাসকষ্টের ভুগে থাকেন তাদের জন্য মধু একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য।
  • মধু অনিদ্রা দূর করার ভালো ঔষধ। রাতে দ্রুত ঘুমানোর সহজ ও কার্যকরী উপায়। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি রাতে গভীর ঘুম হতে সাহায্য করে।
  • মধু যৌন দুর্বলতায় বেশ কার্যকর। টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করার উপায়। পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খায়, তাহলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।
  • মধু মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। মধু দাঁতের উপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। মধু দাঁত পড়া কে বিলম্বিত করে।
  • মধু পাকস্থলী সুস্থ রাখে।  মধু পাকস্থলীতে সুস্থ রেখে হজমের গোলমাল দূর করে। মধুর ব্যবহার হাইড্রোক্লোরিক এসিড কমিয়ে দেয় এবং অরুচি, বমি ভাব, বুকজ্বলা ইত্যাদি দূর হয়।
  • মধু দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মধু চোখের জন্য খুব ভালো একটি খাদ্য। মধু খেজুরের রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অনেক। মধুতে তাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের রঙ এবং ত্বক সুন্দর করে। ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে এবং শরীরের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করে তারুণ্য বাড়ায়।
  • মধু হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়তা করে। মধুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড়, দাঁত, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের উজ্জ্বল বৃদ্ধি করে ও ভঙ্গুরতা রোধ করে।
  • মধু আমাশয় ও পেটের পীড়া নিরাময় করে। এছাড়াও মধুর নানা ধরনের জটিল রোগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
  • মধু উচ্চ রক্তচাপ কমায়। দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মিশিয়ে খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। প্রতিদিন সকালে খাবার এক ঘণ্টা আগে এই মিশ্রণটি খাওয়া উচিত।
  • মধু রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। মধু শরীরের ভিতরে এবং বাইরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতার যোগান দেয়। মধুতে রয়েছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে।


মধুর অপকারিতা

মধুর তেমন কোনো অপকারিতা নেই। অতিরিক্ত মধু খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত মধু খেলে শরীরে অস্থিরতা ও গলায় জ্বালা ভাব হতে পারে। সুতরাং মধু পরিমিত পরিমাণ খাওয়া উচিত। মধুর উপকারিতা অসীম কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে মধু ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মধু যদিও আমাদের জন্য উপকারী, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মধুর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ উপকারিতা রয়েছে। যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের মধু খেলে এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই তাদের মধু না খাওয়াই ভালো। এই অবস্থাই মধু খেলে গলা ফুলে যাওয়া, মাথা ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।


মধু খাওয়ার নিয়ম

মধু শুধুমাত্র খেলেই হবে না মধু খাওয়ার নিয়ম জানতে হয়। তাহলে চলুন জেনে নেই মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম। মধুর তাপমাত্রা ৩২° সেলসিয়াস এর বেশি হলে মধু বিষাক্ত হয়ে যায়। তাই আপনি যখন গরম পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাবেন বা চায়ের চিনির বিকল্প হিসেবে মধু মিশিয়ে খাবেন, তখন খেয়াল রাখতে হবে সেটি যেন অতিরিক্ত গরম না হয়। পানি বাছা হালকা ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। অর্থাৎ পানি বা চা এর তাপমাত্রা ৩২° সেলসিয়াসের নিচে থাকতে হবে। মধু তে থাকা উপাদান গরম কিছুর সংস্পর্শে এসে বিষাক্ত হয়ে যায়। তাই মধু কখনো গরম কিছু সঙ্গে ব্যবহার বা রান্নায় ব্যবহার করা উচিত নয়। মধু ঠাণ্ডা অবস্থায় খাওয়াই উত্তম।


শেষ কথা,

আমরা জানলাম মধুর উপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা, মধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম। সবাই ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন। জানার জন্য সাথেই থাকুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন