আমাদের দেশে খুব পরিচিত ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ থানকুনি। থানকুনির পাতার উপকারিতা অনেক। এই ছোট্ট থানকুনির পাতার মধ্যে রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। থানকুনি পাতার রস রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করে তাহলে তার যৌবন হত্যার তারুণ্য বজায় থাকবে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের কর্ম ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে।

থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা


তাছাড়াও রয়েছে থানকুনি পাতার আরো অনেক উপকারিতা। তাহলে চলুন জেনে নেই থানকুনি পাতার উপকারিতা। এবং আরো জানব, থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম


থানকুনি পাতার উপকারিতা


থানকুনি পাতা চুল পড়া কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সপ্তাহে দুই তিনবার নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে স্কাবের ভেতরে পুষ্টিহীনতা দূর হয়। ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে শুরু করে। এছাড়াও চুল পড়ার হার কমাতে অন্য আরেক ভাবেও থানকুনি পাতা কে ব্যবহার করতে পারেন। পরিমাণমতো থানকুনি পাতা নিয়ে তা ভালো করে থেঁতো করে, তার সঙ্গে পরিমাণমতো তুলসী পাতা, আমলা মিশিয়ে নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর পেস্টটি চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। ১০ মিনিট পর চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুই তিনবার চুলের পরিচর্যা করলে, চুল পড়ার হার অনেকটাই কমে যায়।

থানকুনি পাতা ক্ষতিকারক টক্সিন উপাদান বের করে। নানাভাবে সারাদিন ধরে একাধিক ক্ষতিকারক টক্সিন আমাদের দেহে প্রবেশ করে। এইসব টক্সিন যদি লাগাতার আমাদের দেহে জমতে শুরু করে, তাহলে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হবে। আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করতে সহযোগিতা করে থানকুনি পাতা। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তে তাকা ক্ষতিকারক উপাদানগুলো সহজেই বেরিয়ে যায়। ফলে আমরা একাধিক রোগ হতে সহজেই রক্ষা পায়।

থানকুনি পাতা যৌবন বা তারুণ্য বজায় রাখে। বয়স বৃদ্ধি পেলেও যৌবন ধরে রাখে থানকুনি পাতার রস। এক্ষেত্রে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে ৪ থেকে ৫ চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে চেহারায় লাবণ্য চলে আসে এবং আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তবে নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে অবশ্যই উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও থানকুনি পাতার অন্যান্য জাদুকরী উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি বুঝতে পারবেন কি করে থানকুনি পাতা যৌবন বা তারুণ্য ধরে রাখে।

থানকুনি পাতা খেলে হজম ক্ষমতা উন্নতি ঘটে। থানকুনি পাতা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, থানকুনি পাতায় উপস্থিত একাধিক উপাদান হজমে সহায়ক বিভিন্ন উপাদানের ক্ষরণ যেন ঠিকমতো হয়, সেই দিকে খেয়াল রাখে। ফলে বদহজম এবং গ্যাস্ট্রিক অর্থাৎ এসিডিটির মতো সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না।

থানকুনি পাতা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো এসিড, বিটা ক্যারোটিন এবং ফাইটোকেমিক্যালস ত্বকের মধ্যে থাকা পুষ্টি ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি ত্বকের বলিরেখা কমাতে বিশেষ সহায়তা করে। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

থানকুনি পাতার দাঁতের সমস্যা কমায়। দাঁতের নানা সমস্যা দূর করার জন্য থানকুনি পাতার বিকল্প নেই। মাড়ি ও দাঁতের ব্যথায় রক্তপাতের ক্ষেত্রেও থানকুনি পাতা বিশেষ সহায়ক। যদি থানকুনি পাতার রস জ্বাল দিয়ে কুলকুচি করা যায়, তাহলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।

থানকুনি পাতা ক্ষত নিরাময় করে। যদি কোন পুরনো ক্ষত নিরাময় না হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে থানকুনি পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও আলসার ও বিভিন্ন চর্ম রোগ থানকুনি পাতা দিয়ে নিরাময় করা সম্ভব। ত্বকের মৃতকোষ এর ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা বেশ উপকারী। থানকুনি পাতা প্রায় মৃত কোষ পুনর্জন্মে তো করতে পারে এবং শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে। যার ফলে শুষ্ক ত্বক মসৃন হয়ে যায়।

থানকুনি পাতা আমাশয় এর মত সমস্যা দূর করে। প্রতিদিন সকালে যদি নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে পারেন, আর এমনটা যদি টানা সাতদিন করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই উপকারিতা পাবেন। আমার শরীর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে থানকুনি পাতা কে অন্যভাবেও ব্যবহার করা যায়। প্রথমে পরিমানমতো থানকুনি পাতা বেটে নিন, তারপর থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মেশান, এই মিশ্রণটি ২ চামচ করে দিনে দুইবার খেলে দেখবেন কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে।

থানকুনি পাতা কাশির প্রকোপ কমায়। এক্ষেত্রে দু'চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেলে কাশির প্রকোপ অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও এর পাশাপাশি গলা ব্যথা সেরে যায়। আর এইভাবে যদি এক সপ্তাহ খেতে পারেন, তাহলে তো কোন কথাই নেই। তাই কাশির সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ খাওয়ার আগে আমাদের থানকুনি পাতার রস অবশ্যই খাওয়া উচিত।

থানকুনি পাতার জ্বরের প্রকোপ কমায়। ঋতু পরিবর্তনের সময় যারা প্রায়ই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন, তাদের অবশ্যই থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত। কারণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যে, জ্বরের সময় এক চামচ থানকুনি পাতার রস এবং এক চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে, অল্প সময়ের মধ্যে জ্বর কমে যায়। সেই সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতাও কমে যায়।


থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আরও জেনে নিন


এছাড়াও থানকুনি পাতার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন : অর্শ, গোদ, জন্ডিস ও কৃমির জন্য থানকুনি পাতা খুবই উপকারী। আয়ুর্বেদে থানকুনি পাতা কে রসায়ন বলা হয়। কারণ থানকুনি পাতায় রয়েছে সপ্ত ধাতুর পুষ্টিগুণ। গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। পুকুরপাড়ে কিংবা জলাশয়ের পাশে আবার বিদেশেতে জায়গায় থানকুনি গাছ জন্মায়। যারা গ্রামাঞ্চলে থাকেন, তারা সহজেই থানকুনি পাতা পেয়ে যাবেন। আর যারা শহরাঞ্চলে থাকেন, তারা বাজারে খুব সস্তায় থানকুনি পাতা পেয়ে যাবেন। তাই সুস্থ থাকতে থানকুনি পাতা খাওয়া আজই শুরু করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন